তাহলে কি, জ্ঞানপাপীদের জ্ঞানবাপী ? পড়ুন বিস্তারিত।

তাহলে কি, জ্ঞানপাপীদের জ্ঞানবাপী ? পড়ুন বিস্তারিত।





         প্রাচীন মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদুয়ারা ইত্যাদি স্থাপত্য নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে চুন-সুরকির সুষম মিশ্রণ। কারণ তখনও সিমেন্টের আবিষ্কারই হয়নি। পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দির, কোনারকের সূর্যমন্দির, আগ্রার তাজমহল ইত্যাদিতে অবশ্য চুন-সুরকি অপ্রয়োজনীয় ছিল। কারণ, বড় বড় পাথরের স্ল্যাব সুনিপুণভাবে সাজিয়ে, কোথাও বা লোহার ক্লামের সাহায্যে পরস্পরকে জুড়ে দিয়ে, ওইসব স্থাপত্য নির্মিত হয়। আধুনিক সিমেন্টের প্রাথমিক পদক্ষেপ ১৮২৪ সালে পোর্টল্যান্ড পাথর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। জোসেফ এস্পাডিন তার জনক।

         গত ১৬ মে কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদে একটি 'শিবলিঙ্গ আবিষ্কার'কে কেন্দ্র করে রাজনীতির বাজারে ধুন্ধুমার শুরু হয়েছে। প্রত্যাশিতভাবেই অতি তৎপরতার সাথে 'আবিষ্কৃত' তথাকথিত শিবলিঙ্গটি সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল করেছেন বিদ্বেষবাদী রাজনীতির কারবারিরা। 'মুমকিন' মোদিজীর আশীর্বাদপুষ্ট রিপাবলিকান টিভিসহ নুনখোর গনমাধ্যমের বিশেষ অংশ যথারীতি ঝাঁপিয়ে পড়েছে আপামর ভারতবাসীকে বিভ্রান্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার তদন্তে দেখা গেছে, যে-শিবলিঙ্গ নিয়ে এত শোরগোল, তার ভিডিও ২০২০ সালের এপ্রিল এবং অক্টোবর মাসে পরপর দুবার ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি সদ্য আবিষ্কৃতও নয়, জ্ঞানবাপী মসজিদেরও নয়! আদালত নিযুক্ত তদন্তকারীরা জ্ঞানবাপী মসজিদে যে-বস্তুটিকে শিবলিঙ্গ বলে সাব্যস্ত করে আদালত আরোপিত গোপনীয়তার শর্ত শিকেয় তুলে রেখে মনের আবেগে 'হর হর মহাদেব' বলে চিৎকার করে উঠেছিলেন, সেটি আদতে ওযু-চৌবাচ্চার ফোয়ারা! সবচেয়ে বড় কথা, সেটি প্রস্তর নির্মিত নয়, সেটির নির্মাণে আধুনিক সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে -- যার আবিষ্কার ১৮৫০সালের পরবর্তীকালে।

        কথিত আছে ১৬৬৯ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করে জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মাণ করেন (বস্তুত এই অভিযোগ অর্ধসত্য। ক্ষেত্রবিশেষে অর্ধসত্য মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর!এ বিষয়ে অন্যত্র বিস্তারিত লিখেছি)। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, এই অভিযোগ সত্য! তাহলে প্রশ্ন হল, পরবর্তীকালে মসজিদ-চত্বরে সিমেন্টের শিবলিঙ্গ কে বা কারা তৈরি করল? কঠোর পৌত্তলিকতা বিরোধী ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীরা শিবলিঙ্গ তৈরি করতে যাবেন কেন?

        আসলে দেশবাসীকে আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসা সওদাগরের সার্বিক ব্যর্থতা আজ গগনচুম্বী। সীমাহীন বেকারি, বল্গাহীন মূল্যবৃদ্ধি, আমজনতার অসীম নাচারির কারণে স্বাভাবিক ক্ষোভ যদি স্বপ্নের সওদাগরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাহলে আর রক্ষা নাই। তারচেয়ে সময় থাকতেই আম জনতাকে উগ্র ধর্মান্ধতা ও যুক্তিহীনতার আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ! বহুদিন ধরেই অযোধ্যার শ্রীরামচন্দ্র অপরিমেয় রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট দিয়েছেন। তিনি এখন পরিশ্রান্ত। এমনটা যে ঘটবে তা বিদ্বেষীজীবী ভোটকুশলীরাও জানতেন। তাই গুরুভাই তথা সুপ্রিম-বিচারপতির বিশ্বাস-নির্ভর অযোধ্যা-রায় শোনার সাথে সাথেই ভক্তগণ সমস্বরে গাওনা গেয়ে রেখেছিলেন -- "অযোধ্যা তো ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।"

        একদিকে মেরা মহান ভারত দেউলিয়া শ্রীলংকার পথযাত্রী, অন্যদিকে ২০২৪-এর মহারণ আসন্ন। অতএব এটাই তো লিঙ্গ আবিষ্কারের মাহেন্দ্রক্ষণ! এ যাত্রা উৎরে গেলে পরে তো আরও মোটা দাঁও আছেই -- তাজমহল = তেজো মহালয়!


✍️ চন্দ্রপ্রকাশ সরকার

 

 


 

Post a Comment

Previous Post Next Post