ওযূঃ গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম -

রোকন সাহেব উত্তর নামোপাড়া গ্রামের সবচেয়ে ধনাট্য ব্যক্তি। গ্রামের শেষ মাথায় তার প্রকান্ড বাড়ি। রাজপ্রাসাদ সম এই বাড়ির সদস্য বলতে রোকন সাহেব তার বৃদ্ধা স্ত্রী ও ছয়জন কর্মচারী । তার একমাত্র সন্তান আরিফ আমেরিকান প্রবাসী। তিনি দেশে তেমন আসেন তবে বছরের একবার বাবা-মাকে দেখতে আসেন। এবারও তিনি বাড়িতে এসেছেন তার সন্তান আহমাদের জেদের কারণে । গতকাল পর্যন্ত রোকন সাহেবের যে বাড়ি ছিল নিস্তব্ধ, প্রাণহীন। আজ সেই বাড়ি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শহরের আবদ্ধ বাড়ি ছেড়ে গ্রমের উন্মুক্ত বাড়ির মনোরম বাতাস যেন তাকে উন্মাদ করে তুলেছে। আহমাদের ছোটাছুটিতে আজ পুরো বাড়ি যেন আনন্দে মাতোয়ারা । প্রায় তিন বছর আগে আহমাদ বাবার সাথে দাদুর বাড়িতে এসেছিল, তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর, এখন তার বয়স নয় বছর। তাই বহুদিন পর এবার এসে তার আনন্দের পরিমাণও একটু বেশি। অনেকদিন পর একমাত্র নাতি বাড়িতে আসায় বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দাদি তার নাতিকে পিঠা খাওয়ানোর আয়োজনে ব্যস্ত। বাড়ির সকল কর্মচারীকে তিনি রান্নার কাজে ব্যস্ত করে রেখেছেন। একমাত্র নাতীর সামনে তিনি গ্রাম বাংলার সকল এঁতিহ্যের মাধ্যমে তাকে বরণ করতে চান। রোকন সাহেব সাধারণত বাজার করতে যান না। তবে আজ তিনি বাজারে গেছেন। নিজ হাতে নাতীর জন্য বাজার করবেন।

 

Ozu: One of the means of forgiveness of sins

শহরের চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকা ছেলেটি আজ মুক্ত আকাশের নিচে সেই সকাল হতে ছোটাছুটি করছে। রান্না ঘর থেকে দাদির ভাঙ্গা ভাঙ্গা আওয়াজে ভেসে আসছে আহমাদ! আহমাদ! ডাক। বলে দাদি ডাকছে।

দাদি : আমার পিঠা বানানো শেষ, গরম গরম খেয়ে নাও ভালো লাগবে ।

আহমদ : আমার হাতে ময়লা, তুমি খাইয়ে দাও ।

বাজার হতে ফিরে আহমাদের দাদু আজ সোজা ডাইনিয়ে এসে হাজির, কিছু না বলেই দাদু একটা পিঠা নিয়ে মাত্র মুখে দিয়েছেন। পাশ থেকে আহমাদ বলে উঠল, দাদু তুমি তো হাত ধৌত করনি?

দাদু : না, দাদুভাই।

 

আহমদ : তুমি বাজার থেকে আসলে না?

দাদু : হ্যাঁ, তো কী হয়েছে?

আহমাদ : দাদু তুমি জান না, হাত না ধোয়ার কারণে হাতে-থাকা জীবাণুর দ্বারা খাদ্যনালীতে সংক্রমণ হতে পারে? টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ও পরজীবী সংক্রমণ এসব কারণে হতে পারে । আমরা যদি খাওয়ার আগে বা খাওয়ার মাঝে টাকা, ব্যাগ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি হাত দিয়ে স্পর্শ করি, তাহলে খাবার স্পর্শ করার আগে অবশ্যই হাত ধৌত করতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে এগুলো পরিষ্কার মনে হলেও এসব বন্ত অসংখ্য জীবাণুর উৎস।

দাদু : দাদুভাই তুমি এত কিছু কীভাবে জানলে?

আহমাদ : আমাদের স্কুলে মেডিকেল টিম এসেছিল, তারা ক্যাম্পিং করে বারবার এসব বলে সতর্ক করেছে। কিছুক্ষণ পর যোহরের আযান হলো।

দাদু : আহমাদ! এসো ওযু করি।

আহমাদ : জি, দাদু আসছি।

দাদু : দাদুভাই, তুমি এত দ্রুত ওযু করছ কেন? তোমার তো পায়ের গোড়ালিতে পানি যায়নি?

আহমাদ : সলাত শুরু হবে তো, দেরি হয়ে যাবে।

দাদু : কিন্তু দাদুভাই তুমি কি এটা জান না, ওযু সঠিক না হলে সলাত হবে না। তোমাকে একটা হাদীছ শুনাই। আবু হুরাইরা (র.) হতে বর্ণিত, রাসূল (স.) বলেছেন, যখন কোনো মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা ওযু করে এবং মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন তার মুখমণ্ডল হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায় যা তার দুচোখের মাধ্যমে হয়েছিল। আর যখন সে দুহাত ধৌত করে তখন পানির সাথে কিংবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায় যা তার দুহাত দ্বারা অর্জিত হয়েছিল। আর যখন সে পা ধৌত করে তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায় যা করতে তার পা অগ্রসর হয়েছিল। এমনকি সে গুনাহ হতে পাক-পবিত্র, পরিষ্কার-পরিছন হয়ে যায়

(ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৪)।

ময়লা-আবর্জনা বা ভাইরাস হতে মুক্ত হওয়ার আশায় কত গুরুত্ব দিয়ে, কত হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, স্যাভলনসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে হাত পরিষ্কার কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না যে আমার হাতে সেই ময়লা- আবর্জনা বা ভাইরাস হতে শতভাগ মুক্ত হয়েছে। আর আমাদের সেই অসুখ হবে না। অথচ দেখ! আল্লাহর রাসূল (স.)-এর স্পষ্ট ঘোষণা হলো, সুন্দর করে ওযু করলে পাপ হতে মুক্ত হওয়া যায়। আমরা কে কে গুরুত্ব দিয়ে সেই আমল করছি, যেই ওযুর পানির সাথে আমাদের পাপ ঝরে যায়।

আহমাদ : ঠিক আছে দাদু, আমি বুঝতে পেরেছি। আবার ভালো করে ওযু করছি। তুমিও ওযু করো । সলাত শুরু হয়ে যাবে।

তারপর দাদা-নাতি ভালোভাবে ওযু করে সলাত আদায়ের জন্য মসজিদ অভিমুখে রওয়ানা দিল।

 

লেখক-  আব্দুল্লাহ রাসেল

বগুড়া, বাংলাদেশ

 

Post a Comment

Previous Post Next Post