কম্পিউটারের বাহ্যিক অবকাঠামো তৈরির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র সামগ্রীকে হার্ডওয়্যার বলে। অর্থাৎ কম্পিউটারের যে সকল অংশ ধরা ছোয়া বা স্পর্শ করা যায় তাদেরকে হার্ডওয়্যার বলা হয়। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সামগ্রীর মধ্যে ইনপুট ডিভাইস, আউটপুট ডিভাইস ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ অংশ, স্মৃতি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ হার্ডওয়্যার সামগ্রী পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল। হার্ডওয়্যার সামগ্রী সুষ্ঠুভাবে সংযোগ প্রদান করে কম্পিউটারের বাহ্যিক কাঠামো তৈরি করা হয়। কিন্তু কেবলমাত্র হার্ডওয়্যার নিজে থেকে কিছুই করতে পারে না। হার্ডওয়্যারকে কর্মক্ষম করে তোলার জন্য সফ্টওয়্যার প্রয়োজন হয়।
general information about Computer photo from- https://www.pexels.com/ |
কম্পিউটারের ইনপুট, আউটপুট ও প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রী রয়েছে। ইনপুট হার্ডওয়্যার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কী-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, জয়স্টিক, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ইত্যাদি। প্রক্রিয়াকরণ ও অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সিপিইউ, প্রধান স্মৃতি, সহায়ক স্মৃতি, সিডি ও ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ, বিভিন্ন প্রকার কার্ড, স্লট পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট, মাদারবোর্ড ইত্যাদি এবং আউটপুট সংক্রান্ত হার্ডওয়্যারের মধ্যে মনিটর, প্রিন্টার, প্লটার, ভিডিও প্রজেক্টর, সাউন্ড বক্স, বিভিন্ন প্রকার ডিস্ক ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।
হার্ডওয়্যারের প্রকারভেদ: কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
১. ইনপুট ডিভাইস বা যন্ত্রপাতিসমূহ, যেমন – কীবোর্ড, মাউস, ইত্যাদি।
২. আউটপুট ডিভাইস বা যন্ত্রপাতিসমূহ, যেমন – মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি।
৩. সিপিইউ বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এর যন্ত্রপাতিসমূহ, যেমন – প্রধান স্মৃতি, সহায়ক স্মৃতি ইত্যাদি।
কী-বোর্ড
এটি বহুল ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস। দেখতে অনেকটা টাইপরাইটারের কী-বোর্ডের মতো। তবে কম্পিউটারের কী-বোর্ডে কার্সর কী, ফাংশন কী, অপারেশন কী, ফরম্যাট কী, নিউমেরিক কী-প্যাড হিসেবে অতিরিক্ত কয়েকটি কী থাকে। এছাড়া রয়েছে মডিফায়ার কী যেমন- শিফট, অপশন, কমান্ড, কন্ট্রোল, অল্টার ইত্যাদি।
নিচে কী-বোর্ডের বিভিন্ন কীগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল :
১. Character Key
কী-বোর্ডে A থেকে Z পর্যন্ত যে কীগুলো দেখা যায়, এগুলোকে ক্যারেক্টার কী বলা হয়। এই কীগুলোতে বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর থাকে। এই কীগুলোর সাহায্যে টাইপ করা হয়। যেমন- Computer is an important things.
২. Numeric Keypad
এই অংশটি কী-বোর্ডের ডানপার্শ্বে ক্যালকুলেটরের মত অবস্থান করে। কেবলমাত্র সংখ্যা নিয়ে কাজ করার জন্য এই অংশটি ব্যবহার করা যায়। Num Lock লেখাযুক্ত কী একবার চাপ দিলে এই কী প্যাড On হয়। পুনরায় যদি Num Lock কী চাপ দেয়া হয় তাহলে এই কী প্যাড Off হয়। অফ থাকলে সংখ্যা ভিন্ন নিচের অন্য কমান্ডগুলো কাজ করবে।
৩. Functional Keys
কীবোর্ডের একেবারে উপরের সারিতে F1 থেকে F12 পর্যন্ত যে কীগুলো দেখা যায় এগুলোকে Functional Keys বলা হয়। এই কীগুলো এক একটি ফাংশন পরিচালনা করতে পারে। যেমন F1 কী চাপ দিলে হেল্প এর অপশন সক্রিয় হয়।
৪. Tab Key
এই কীতে চাপ দিলে কার্সর কয়েক ঘর লাফ দিয়ে যাবে। সাধারণত ০.৫ ইঞ্চি দূরত্ব একবারে অতিক্রম করবে।
৫. Caps Lock Key
এই কী একবার চাপ দিলে কীবোর্ডের উপরের দিকে Caps Lock লেখার উপর বাতি জ্বলে উঠবে অর্থাৎ Caps Lock অপশন On হবে। On করা অবস্থায় কোন কিছু টাইপ করলে বড় হাতের অক্ষর টাইপ হবে। পুনরায় Caps Lock বোতাম একবার চাপ দিলে Caps Lock Off হবে। Off করা অবস্থায় লিখতে থাকলে লেখাগুলো ইংরেজি ছোট হাতের হবে।
৬. Escape Key
অনেক এপ্লিকেশন প্যাকেজে Esc কী চাপ দিয়ে কমান্ড বাতিল করা যায়।
৭. Shift Key
যেসব কী একসাথে দুটো কী এর কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে Shift কী চেপে কী চাপলে উপরেরটি কাজ করবে আর Shift কী ছাড়া চাপলে নিচেরটি কাজ করবে। যেমন Shift কী চেপে ধরে কোন অক্ষরের কী টাইপ করলে ইংরেজি বড় হাতের হবে অর্থাৎ ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটার হবে। আবার Shift কী ছেড়ে দিয়ে টাইপ করলে ছোট হাতের হবে।
৮. কন্ট্রোল কী
Ctrl Key কে কন্ট্রোল কী বলা হয়। এ কী ব্যবহার করে বিভিন্ন এপ্লিকেশন প্যাকেজে আদেশ প্রদান করা হয়।
৯. অল্টার কী
Alt Key কে অল্টার কী বলা হয়। এ কী ব্যবহার করে বিভিন্ন প্যাকেজে মেনু নির্বাচন করা হয়।
১০. Enter কী
কম্পিউটারে কোন কমান্ড দেয়ার জন্য কমান্ড লেখার পর Enter কী ব্যবহার করতে হয় । এই কী দিয়ে লেখার সময় নতুন লাইন শুরু করা যায়।
১১. Backspace কী
কার্সরকে পিছনের দিকে নেবার জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়। এই ক্ষেত্রে যদি লেখা থাকে কার্সর পিছনের দিকে যাবার সময় সেই লেখাকেও মুছে ফেলে। এক লাইন শেষ হলে কার্সর তার উপরের লাইনে যায়।
১২. Arrow কী
এই কীগুলোকে কার্সর মুভমেন্ট কী বলা হয়। এই কীগুলোর মধ্যে লেফট কী, রাইট কী, আপ কী, ডাউন কী আছে। এই কীগুলোর ব্যবহার করে কার্সরকে বামে, ডানে, উপরে ও নিচে সরানো যায়।
১৩. Page Up, Page Down, End, Home কী
এই কীগুলোর ব্যবহার বিভিন্ন এপ্লিকেশন প্যাকেজের কার্যক্ষেত্রে দরকার হয়।
১৪. Insert কী
বিভিন্ন এপ্লিকেশন প্যাকেজে ঢুকে এই কী একবার চাপ দিলে Screen এর নিচে Over আসে। Over থাকা অবস্থায় কোন লেখার নিচে কার্সর রেখে লিখতে থাকলে পূর্বের লেখা মুছে নতুন লেখা সৃষ্টি হবে। ডস ভিত্তিক প্রোগ্রামে পেস্ট করার জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়।
১৫. Del কী
Del কী কে Delete কী বলা হয়। কোন লেখা বা অবজেক্ট নির্বাচন করে এই কী চাপ দিয়ে তা মুছে যায়। কার্সরকে কোন জায়গায় রেখে এই কী চাপ দিলে কার্সরের ডানের খালি অক্ষর মুছে যাবে।
১৬. Pause কী
কিছু কিছু বার্তা আছে যা মনিটরে সামান্য সময়ের জন্য প্রদর্শন করে, এমতাবস্থায় বার্তাগুলো মনিটরে এত কম সময়ে অবস্থান করে যে এগুলো কোন অবস্থাতে পড়া সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে Pause কী একবার চাপ দিলে বার্তাগুলো স্থায়ী থাকে। পুনরায় যে কোন বোতাম চাপলে পূর্বের অবস্থায় বার্তাগুলো চলে যাবে।
১৭. Space Bar কী
কীবোর্ডের নিচের দিকে লম্বা একটি কী। এই কী কার্যক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন হয়। যেমন- লেখার মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি করতে হলে এই Key ব্যবহার করতে হয়।
১৮. Print screen কী
এই কীতে চাপ দিলে মনিটরে দৃশ্যমান চিত্র ইমেজ হিসেবে মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। পরে তা যেকোন গ্রাফিক্স প্রোগ্রামে বা ওয়ার্ডে পেস্ট করা যায়। প্রয়োজনে তাকে কাগজে প্রিন্ট করাও যায়।
অথবা এটাকে স্ক্রিনশট নেওয়া বলা হয়।
পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে সেয়ার করুন। ধন্যবাদ।