ছোট্ট চড়ুই পাখি হয়েছিল 4 কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল ~ পড়ুন বিস্তারিত jotosob.in

চড়ুই একটা ছোট্ট শান্তিপ্রিয় পাখি, কিন্তু ছোট চড়ুই পাখি একসময় চার কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল বলা হয়ে থাকে ভুল থেকে আমরা নতুন কিছু শিখি কিন্তু যখন একটা দেশের সরকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তখন সেটাকে কিন্তু ভুল বলা যায়না বলা হয় বোকামি যার ফল ভোগ করতে হয় দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষকে প্রিয় পাঠকগন আজকের ব্লগে এমনই এক দেশের কথা আপনাদেরকে জানাবো যার ফলে এই ছোট্ট চড়ুই পাখি হয়েছিল 4 কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ আর এই ঘটনাটিকে বলা হয় ইতিহাসে সবথেকে দুঃখজনক ঘটনা তাই বিস্তারিত জানার জন্য ব্লগের পোস্ট-টি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়ুন

সময়টা ছিল 1958 সাল তখন চীনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাও জেদং 1958 সালে চীন আজকের মত উন্নত ছিল না তখন খুবই গরীব একটা দেশ ছিল, যেখানে মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় 65 কোটি যারা মূলত কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল ছিল কিন্তু সেই সময় খাদ্যের অভাব ছিল তারা যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন করত তা, মোটামুটি তাদের দেশ যুগান্ত হয়ে যেত কিন্তু দেশের বাইরে সেই ফসল বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জন করবে সেই উপায় ছিল না এই খাদ্যের অভাবে সাথে ছিল ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা রোগের মত কিছু ভয়াবহ রোগ এদিকে প্রেসিডেন্ট মাও জেদং মানুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি চীনের শাসন তার উপরে ছেড়ে দিলে অনেক উন্নত হবে দেশে

সেই সময় পৃথিবীর সবথেকে ধনী দেশ ছিল ব্রিটেন এবং তৃতীয় নম্বর আমেরিকা  তিনি বলেন চীনের এত উন্নতি করবেন যাতে তিনি আমেরিকাকে পেছনে ফেলে দিয়ে অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ বানাতে পারেন এই কারণে মাও জেদং ফরওয়ার্ডনামে একটা পরিকল্পনা নিয়ে আসেন যার অর্থ ভবিষ্যতের দিকে এক বড় লাভ

তিনি দেশের সব মানুষদের বলেন তারা যেন নিজেদের বাড়িতে ছোট ছোট ভাই বানিয়ে তাতে স্টিল এবং লোহা তৈরি করে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাবে আর সব কৃষকদের বলা হয় প্রচুর পরিমাণে চাষাবাদ করতে যাতে সঠিক খাদ্যের যোগান দেওয়া যায় আর দেশের বাইরে বিক্রি করা যায় তবে মাধ্যমে সামনে আরও একটা বড় সমস্যা ছিলো তিনি বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব কলেরা ডেঙ্গু প্লেগ এর কারণে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ মারা যেত আর এই রোগগুলো ছড়ায় মশা-মাছির মত পতঙ্গরা তখন ঠিক করেন একটি পেস্ট ক্যাম্পের নামের অভিযান চালাবে, আর এটাই হতে চলেছিল পৃথিবীর সবথেকে বড় ভুল এই ক্যাম্পেইনের টার্গেট করা হয় মশা মাছি ইঁদুর এবং চড়ুই পাখি দেশের প্রতিটা মানুষকে বলেন এই চারটি জীবকে যেখানে দেখতে পাবে সেখানেই মেরে ফেলতে এদেশের পরিমাণ কমবে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাবে এবার মশা মাছি মারার কারণ এই দুটি পতঙ্গের জন্য ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া কলেরা রোগ হয় কিসের কারণে হয় এবার নিশ্চয়ই আপনি ভাবছেন এখানে চড়ুই পাখি মারার কথা কেন বলা হয়েছে, প্রকৃত কোন রোগ ছড়ায় না আসলে সেই সময় চীনের প্রেসিডেন্ট মানে যদি কোন আইডিয়া ভালো লাগতো তিনি বিচার না করেই সেই নিয়ম দেশে চালু করে দিতেন সেই সময় সরকারের কাছে ইনফর্মেশন আসে যে একটা চড়ুই পাখি এক বছরে প্রায় সাড়ে 4 কেজি চাল খেয়ে ফেলে সেই হিসাবে তারা গনণা করে দেখেন যে চিনি না জানি কত কোটি কোটি চড়ুই পাখি রয়েছে যারা প্রতিবছর সাড়ে 4 কেজি হিসাবে কোন ফসল খেয়ে ফেলে সব পাখিদের যদি মেরে ফেলা যায় তাহলে এই বিপুল পরিমান ফসল বাঁচানো যাবে আর দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারাই বেঁচে যাওয়া ফসল বাইরের দেশে বিক্রি করতে পারবে।

এই কারণে মাও জেদং বলেন আমাদের দেশ এই চারটি ছাড়াও খুব ভালোভাবে চলবে আর এখান থেকে শুরু হয় এই চার প্রজাতির জীব কে হত্যা করার অভিযান ধীরে ধীরে এই চার প্রজাতির জীবের প্রতি চীনের মানুষদের যুদ্ধের রূপ নেয়। যাতে পাঁচ বছরে ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর লোকজনও যুক্ত হয়েছিল তবে লোকজন মশা-মাছি মেরে অতটা মজা পাচ্ছিল না যতটা মজা তারা চড়ুই পাখি মেরে পাচ্ছিল কারন চড়ুই পাখি সহজেই দেখা যেত মশা মাছির মত লুকিয়ে থাকতে পারত না তারা চড়ুই পাখি মারার জন্য নতুন নতুন সব পদ্ধতি বেছে নেয়যার মধ্যে একটা ছিল যে, চীনের লোকজন ঢাকঢোল থালা-বাসন বাজিয়ে ওই ছোট্ট পাখির পিছু করতো। ভিষণ আওয়াজে পাখিরা ভয় পেয়ে যেত তারা নিচে নামতনা আর আকাশে উড়তে থাকতো ক্রমাগত উড়তে উড়তে যখন এই পাখিগুলো ক্লান্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যেত, তখন চীনের লোকজন সেগুলোর উপর হিংস্র শিকারির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ত আর তাদের মেরে ফেলত

এই পদ্ধতি ছাড়াও ছোট ছোট বাচ্চারা গুলতি দিয়ে, অনেকে বন্দুক দিয়ে, একের পর এক চড়ুই মেরে ফেলেছিলোএমনকি তারা আজও ধরনের ফাঁদ পেতেছিল এই পাখিদের মারার জন্য তারা পাখিদের বাসা ভেঙে দেয়, তাদের ডিম ফাটিয়ে দেয়, তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের মেরে ফেলে, যা তাই পাখিরা বংশবিস্তার করতে না পারে স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষেরা শহর থেকে গ্রাম সাধারণ মানুষসহ বাহিনীর লোকেরা সবাই স্বীকার করতে থাকে এমন কিছু সময় এমন প্রতিযোগিতা হতো যেখানে যে ব্যক্তি সবথেকে বেশি পারবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হতো স্কুলে যে বাচ্চারা সব থেকে বেশি জরুরি নিয়ে আসতো তাদের পুরস্কার দেওয়া হতো চীনের মানুষ আচরণ করে যে তার মৃত্যুর পাখিদের মালা বানিয়ে নিজের গলায় পড়তে শুরু করে তাদের নৃশংসতায় এতটাই বেশি ছিলো যে, এই পোস্ট ক্যাম্পেইন শুরু প্রথম দিনেই তারা প্রায় 2 লক্ষ চড়ুই পাখি হত্যা করে ফেলেছিল। 

চীনের লোকদের পাখি হত্যা একটা নেশার মতো ঘিরে ধরে তারা এই নির্মম কাজে আনন্দ খুঁজে পায় 1958 সাল থেকে 1959 সাল পর্যন্ত এই এক বছরে তারা প্রায় 100 কোটি চড়ুই পাখি মেরে ফেলেছিল এছাড়া তারা প্রায় 300 কোটি কেজি ইদুর এবং 11 কোটি পরিমাণে মাছি মেরেছিল সেই সময় একটি ঘটনার প্রতি জানাই এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে থাকা পোল্যান্ড এম্বাসি মধ্যে কি আশ্রয় নিয়েছিল লোকগুলো মারার জন্য এম্বাসি মধ্যে ঢুকতে চায় কিন্তু এম্বেসি লোকজন তাদের বাধা দেয় তখন চীনারা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে আরও জোরে জোরে থালা বাসন বাজাতে শুরু করে

উড়ে যাওয়া যে সেই পাখিটি আকাশে উড়তে শুরু করে আর তখন গুলি করে মেরে ফেলা হয় আগামী দু'বছরের মধ্যে চীনে চড়ুই পাখি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় কিন্তু চীনের মানুষদের পাশে একটা নেশা লেগে যায় এবং অন্যান্য পাখিদের মারতে শুরু করে আর চীনের সকল প্রকার পাখির পরিমাণ কমে যায় হত্যাকাণ্ডের ফলে পর্যন্ত সফল হয়ে যায় কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়ার ফল

এবার চীনের মানুষ সব ভোগ করতে শুরু করে আপনার অনেকে জানেন ফুড চেইনের হিসাবে প্রকৃতিপ্রদত্ত আছে যেমন ধরুন ব্যাংক পোকামাকড় খায় আবার সাপ ব্যাংকে খাবারের মধ্যে যদি কোন একটা প্রাণীকে আপনি সরিয়ে দেন তাহলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে যেমন যদি আপনি প্রকৃতি থেকে সরিয়ে দেন তাহলে সাপের প্রজাতি অনেক বেড়েযাবে আবার যদি পৃথিবী থেকে সব শান্তির মেরে ফেলা হয়যখনই বাধা আসবে তখনই প্রকৃতি ভয়ানক রূপ নেবে 

চীনের মানুষের প্রকৃতির নিয়মে বাধা দিয়ে ছিল তারা চড়ুই এবং অন্যান্য পাখিদের এত পরিমাণে মেরে ফেলেছিল, যে তারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তখনও কি এটা ভাবি নি যে পাখিরা ফসলেরপাশাপাশি ছোট ছোট কীটপতঙ্গ কেউ খায় আর এই সমস্ত কীটপতঙ্গ বেশি করে নষ্ট করে

অতিরিক্ত পরিমাণে পানি মেরে ফেলার কারণে চিনির পরিমাণ এক বছরের মধ্যে কয়েক গুণ বেড়ে যায় যাদের মধ্যে সবথেকে ভয়ানক ছিল পঙ্গপালের দল যারা দল বেঁধে আসতো আর হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট করে দিয়ে চলে যেত আর হাজার হাজার পিঁপড়ের জমির ফসল কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে নষ্ট করে দিয়ে চলে যেত এভাবেই তারা পরবর্তী গ্রামের আক্রমন করত চীনের মানুষেরা এই ধরনের ভয়ানক পরিস্থিতির কল্পনাও করতে পারেনি 

চিনের দূর্ভিক্ষ

পঙ্গপালের দল এত পরিমাণে বেড়ে যায় এক বছরের মধ্যে সারা চিনে ফসলের বিরাট ঘাটতি দেখা দেয় এমনকি কীটনাশকের ব্যবহার করেও কোনো রকম লাভ হচ্ছিল না প্রকৃতির নিয়মের বাধা দেওয়ার ফল এবার চীনের মানুষেরা পাচ্ছিল ক্রমাগতভাবে চীনে খাদ্য সংকট দেখা দেয়দুর্বৃত্তরা সারাদেশে একটা প্রশ্নের জন্য তারা হাহাকার করতে শুরু করে এইসময় মানুষেরা গাছের পাতা এমনকি মাটি খেতে শুরু করে নিজেদের খিদে মেটানোর জন্য

চিনের দূর্ভিক্ষ

দেখে বুঝতে পারেন যে যতটা ক্ষতি করে তার থেকে অনেক বেশি উপকার করে বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে তাই তিনি চড়ুই পাখির হত্যার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেন কিন্তু ততদিনে অনেক বেশী দেরী হয়ে গিয়েছিল খাদ্যের অভাবে এর মধ্যে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তাতে প্রায় 4 কোটি মানুষ মারা যায় তবে চীনের সরকার এই মৃত্যুসংখ্যা গোপন রেখেছিল 

আর দুনিয়ার কাছে তারা জানিয়েছিল যে চিনে মাত্র দেড় কোটি মানুষ মারা গেছে আর মৃত্যুর কারণ তারা দিয়েছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী কালে বেশ কিছু গবেষণা হয় এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে তাদের সরকারের বলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম তা বোঝা যায় একজন ছিলেন সাংবাদিক জন্ম হয়েছিল 1947 সালে তিনি দুর্ভিক্ষকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি তার বইতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, এবং এখানে তিনি মৃত্যুর সংখ্যা তিন থেকে চার কোটি বলেছেন

আর জানিয়ে দিয়েছে সরকার ব্যান্ড করে দিয়েছে এমনকি আজ পর্যন্ত চীনের কোথাও এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নিয়ে আলোচনা করা হয় না আর এরকম বোকামি একবার করি থামেনি সত্তরের দশকে যখন মারা যায় তখন চীনের সরকার গ্রামের কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য পশুপাখিদের ধরে বাজারে বিক্রির পরামর্শ দেয় ধীরে ধীরে চীনে ভয়াবহ সব রোগের আবির্ভাব হয় আর এমন একটা রোগ ছিল করোনা

👇👇 আরও পড়ুন- 👇👇



 

Post a Comment

Previous Post Next Post