নপুংসকতা (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন)-এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী?

 নপুংসকতা (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন)-এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী?

ইরেকটাইল ডিসফাংশন( erectile dysfunction), বা লিঙ্গের উত্থান ত্রূটি সহজ ভাষায় যাকে বলা যায় যৌন অক্ষমতা বা দুর্বলতা। পুরুষদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয় এটি। এই একুশ শতকে দাঁড়িয়েও অনেকের কাছেই এটি একটি ট্যাবু। তাই লোকসম্মুখে এই সমস্যাটি নিয়ে কথা হয় না বললেই চলে। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন হারবাল প্রতিষ্ঠানের অগুনতি পোস্টার ঠিকই দেখা যায়, এবং হারবাল চিকিৎসালয় বা ওষুধের দোকানে রোগীদের লাইনও লেগে থাকে।
What are the early symptoms of impotence?


নপুংসকতায় একজন পুরুষ তাঁর সঙ্গিনীর সাথে সন্তোষজনক যৌন সহবাসের জন্য লিঙ্গের উত্থিত রাখায় সফল হতে বা ধরে রাখতে অসমর্থ হন। জৈবিকভাবে, লিঙ্গের উত্থান বজায় রাখার জন্য, লিঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ রক্ত সরবরাহ হওয়া চাই। এছাড়া, নার্ভ বা স্নায়ুগুলির অনবরত প্রেরণাশক্তি যোগাতে সক্ষম হতে হবে। লিঙ্গের উত্থানের জন্য কোনও হাড় অথবা কোনও অনুরূপ সহায়ক কাঠামো থাকেনা। রক্তবাহী নালীগুলি স্নায়ুতন্ত্রের সাথে যোগাযোগে লিঙ্গের উত্থান হয়। একটা সুস্থ এবং সুখী জীবনের জন্য একটা স্বাস্থ্যকর যৌন জীবন থাকা আবশ্যক। নপুংসকতার জন্য বহুবিধ কারণ থাকে যেমন লিঙ্গের ধমনীতে অপর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ, বয়সের কারণে ধমনী শক্ত হওয়া (অ্যাথেরোস্ক্লোরোসিস), ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান ইত্যাদি। চিকিৎসা বিকল্পের মধ্যে আছে ওষুধ, হরমোন থেরাপি, লিঙ্গ শরীরে স্থাপন এবং সাহায্য এবং পথনির্দেশের জন্য পরামর্শ।

নপুংসকতা (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন) এর উপসর্গ-

লিঙ্গ উত্থান হওয়ার ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়া (স্তম্ভন) সম্পর্কিত উপসর্গগুলি হচ্ছে খুব কম এবং এর মধ্যে আছেঃ

• সম্পূর্ণভাবে উত্থান করানোর অক্ষমতা।
• হ্রাসপ্রাপ্ত (কমে যাওয়া) যৌন আকাঙ্ক্ষা।
• দ্রুত বীর্যপাত হওয়া।
• বিলম্বে বীর্যপাত হওয়া।
• টেস্টোসটেরন বা পুরুষের যৌন হরমোনের মাত্রা কম হওয়া।
• অ্যানোর্গাজমিয়া দেখা দেয়া, অর্থাৎ পর্যাপ্ত উত্তেজনা সত্ত্বেও অর্গাজম লাভে ব্যর্থ হওয়া।
নপুংসকতা (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন) হওয়ার কারণ-
জৈবিকভাবে, একজন পুরুষের ক্ষেত্রে, যৌন উত্তেজনা হওয়ার প্রক্রিয়া এবং লিঙ্গ উত্থান করানো হচ্ছে একটা জটিল প্রক্রিয়া যার সঙ্গে জড়িত স্নায়ুতন্ত্র (মস্তিষ্ক এবং শিরদাঁড়া, এগুলির সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলি), এন্ডোক্রিন (হরমোন) ব্যবস্থা, এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম (হৃৎপিণ্ড)। এইসমস্ত শরীরগত ব্যবস্থার যেকোন একটাতে কোনও গোলমালের কারণে নপুংসকতা ঘটতে পারে। এমনকি লিঙ্গ অথবা শুক্রাশয়গুলিতে (টেস্টিজ) কোনও শারীরিক বা কাঠামোগত অস্বাভাবিকতা নপুংসকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

নপুংসকতার কয়েকটা কারণের তালিকা নীচে দেওয়া হলঃ


• উচ্চ রক্তচাপের মত হার্টের ব্যাধিগুলি।
• ডায়াবেটিস মেলিটাস।
• স্থূলতা।
• পারকিনসন্স ডিজিজ, মাল্টিপ্‌ল স্ক্লোরোসিস।
• কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
• উচ্চ মাত্রার তামাক খাওয়া, মদ্যপান অথবা অন্যান্য ধরণের নেশাকর বস্তুর অপব্যবহার।
• মানসিক চাপ।
• বর্ধিত প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড।
• অস্বাভাবিক থাইরয়েড হরমোন মাত্রা এবং বর্ধিত প্রোল্যাক্টিন মাত্রা।
• হাইপোগোনাডিজম (হ্রাসপ্রাপ্ত টেস্টোস্টেরোন মাত্রা)।
• বিষণ্ণতা।
অটুট কাম বা যৌনতাড়নাসমূহ
• মানসিক সমস্যা, উদ্বেগ।
• ভাস্কুলার (সংবহনতান্ত্রিক) অপ্রতুলতা (অ্যাথেরোমা)।
• ওষুধ (উদাহরণস্বরূপ, বিটা ব্লকার্স, থায়াজাইড ডায়ুরেটিকস, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস বা অবসাদ-প্রতিরোধী ইত্যাদি)।

নপুংসকতা (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন) এর চিকিৎসা-

রোগীর মিডিক্যাল এবং ব্যক্তিগত ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে যা ডাক্তার মূল্যায়ন করেন, চিকিৎসার বিকল্পগুলি প্রতিটি মানুষে ভিন্ন হয় এবং কারণসূচক শক্তির উপরে প্রধানতঃ নির্ভর করে।
কয়েকটা চিকিৎসা বিকল্প হল সিল্ডেনাফিল (ভায়াগ্রা, 50-100mg), টাডালাফিল, ভারডেনাফিল, এবং অ্যাভানাফিল-এর মত ওষুধ নেওয়া।
• টেস্টোস্টেরোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নপুংসকতা যুক্ত কিছু মানুষের জন্য দেওয়া হতে পারে। এটা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং পেশীর শক্তি এবং যৌনতাড়না পুনরুদ্ধার করে। টেস্টোস্টেরোন প্রয়োগ করার জন্য যেসমস্ত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় সেগুলো হল ইন্ট্রামাস্কুলার (পেশীর মধ্যে) ইঞ্জেকশন, ত্বকনিম্নস্থ জায়গায় ইঞ্জেকশন, ট্রান্সডার্মাল ইঞ্জেকশন অথবা মৌখিক ওষুধ প্রয়োগ।
• চরম কেসগুলিতে একটা ভ্যাকুয়াম ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এটা একটা বাইরে থাকা প্ল্যাস্টিক সিলিন্ডার এবং একটা ভ্যাকুয়াম পাম্প দিয়ে গঠিত যা লিঙ্গের মধ্যে রক্ত টানে যা উত্থানকরণে সাহায্য করে।
• লিঙ্গ শরীরে স্থাপন করা (ইমপ্ল্যান্ট) খুব কমই ব্যবহৃত হয় (স্থায়ী রড বা বায়ুভরা আধার ধরণের)।
• তরুণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যাদের লিঙ্গে হ্রাসপ্রাপ্ত (কমে যাওয়া) রক্তপ্রবাহের সমস্যা আছে ভাস্কুলার রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারি (রক্ত-সংক্রান্ত পুনর্গঠনকর অস্ত্রোপচার)।
• বিকল্প চিকিৎসার মধ্যে আছে কোরিয়ান রেড জিনসেং (প্যানাক্স জিনসেং, 900 mg দিনে তিনবার) যা উত্থানকরণ উন্নত করে।
জীবনধারা পরিবর্তন-
সাইকোথেরাপি যার সাথে দম্পতিকে সাহায্য এবং পথনির্দেশ জড়িত, হচ্ছে মানসিক সমস্যাগুলি আলোচনা করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। স্নায়ুরোগ (নিউরোপ্যাথি) এবং রক্তপ্রবাহ-সংক্রান্ত রোগ (ভাস্কুলার) একেবারে আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু কয়েক রকমের চিকিৎসা পাওয়া যায়। মৌখিক ওষুধও পাওয়া যায়। রোগীর অবস্থা উন্নত করার জন্য অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করা যেতে পারে।
• কার্ডিও (হার্ট সংক্রান্ত) ব্যায়ামগুলো শুরু করুন। স্থূলতা থেকে মুক্তি পেতে এবং সহজে ওজন কমাতে হাঁটুন এবং দৌড়ান।
• স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বেছে নিন। ফল, শাকসবজি, দানাশস্য, এবং মাছের মত স্বাস্থ্যকর খাবার নপুংসকতার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
• অন্তর্নিহিত রোগের চিকিৎসা করান। ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং হাইপারটেনশন হল নপুংসকতার দুটো প্রধান কারণ। অতএব, ওষুধ এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সাথে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সেই সাথে ব্যায়াম নপুংসকতার সমাধানে সাহায্য করে।
• কেগেল ব্যায়ামগুলির মত শরীরের নীচের অংশ এবং শ্রোণীচক্রের (পেলভিস) ব্যায়াম চেষ্টা করুন। এই ব্যায়ামগুলি পেলভিস-এ (কোমর) এবং শরীরের নীচের অংশগুলিতে পেশীর পর্যাপ্ত দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
• চাপ সামলান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।
• ধূমপান এবং মদ্যপান কমান।

নপুংসকতা থেকে বাঁচতে যেসব খাবার খাবেন-

• ডার্ক চকলেট
• সবুজ সবজি
• পেস্তা বাদামের প্রোটিন
• অয়েস্টারের জিঙ্ক
• তরমুজের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
• টমেটোর লাইকোপেন
• রেড ওয়াইন
• এছাড়া আপেলও কামোদ্দীপনা বাড়াতে সাহায্য করে।

এই মূল্যবান তথ্যটি আপনার বন্ধুদের সেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post