কানের সমস্যা দূর করার উপায় | বাচ্চাদের কানে ব্যথা হলে করণীয় কী?
Ways to remove ear problems.
পঞ্চ ইন্দিয়ের অন্যতম কান। কানের নানাবিধ সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কী করবেন কানে অসুখ হলে? আসুন আজকের পোস্টে আমরা কানের অসুখ বা রোগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর আপনাদের সংগে সেয়ার করি। প্রথমে প্রশ্ন গুলি দেখে নিই।
প্রশ্নঃ
১. কানের ছোটখাট অসুখও কেন অবহেলা করা উচিত নয়?
২. অনেক সময় দেখা যায়, স্নান করতে গিয়ে কানে জল ঢুকে গেল। শিশুদের বেলায় এমন সমস্যা বেশি হয়। সেই সময় কী করা উচিত?
৩. শিশু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময় অসাবধানে তার কানে দুধ ঢুকে পুঁজ হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার খেলাচ্ছলেও বাচ্চারা কানে জল ঢুকিয়ে ফেলে ও সেখান থেকেও বিপত্তি হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাড়তি কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
৪. কী করে বুঝবেন সন্তান জন্মের পর কানে শুনতে পাচ্ছে কি না?
৫. আজকাল ট্রেনে, বাসে, ওষুধের দোকানে কান পরিষ্কার করার বাডস বিক্রি হয়। এগুলো কতটা নিরাপদ?
৬. কানের ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও তো অসুখ করতে পারে?
৭. কানে ব্যথা হলে কী করতে হবে?
৮. কানে কম শোনাও খুব প্রচলিত সমস্যা। এখন অনেক কমবয়সিদেরও এটা হয়। এই সমস্যা কেন হয় ?
উত্তরঃ
১. কানের ছোটখাট অসুখও কেন অবহেলা করা উচিত নয়?
কান কিন্তু শুধু শুনতে সাহায্য করে, এমন নয়। বরং শোনার সঙ্গে সঙ্গে কান দেহের ভারসাম্য রক্ষার কাজ করে। বিশেষত, অন্তঃকর্ণের উপরেই এই ভার থাকে। কানের খুব তুচ্ছ অসুখও অবহেলা করা উচিত নয়। এতে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, স্নান করতে গিয়ে কানে জল ঢুকে গেল। শিশুদের বেলায় এমন সমস্যা বেশি হয়। সেই সময় কী করা উচিত?
কানের গঠনের কারণে এবং শরীরের এমন জায়গাতে কানের অবস্থান যে স্বাভাবিক ও শান্ত হয়ে স্নান করলে কোনওভাবেই জল ঢুকতে পারে না। ঢুকলেও বেরিয়ে যায়। কিন্তু তাড়াহুড়ো করলে বা স্নানের সময় খুব ঘাড়-মাথা নাড়ালে, ছটফট করলে বা জল ঢালার কোনও ভুল পদ্ধতির জন্য কানে জল ঢুকতে পারে। এমন যাতে না হয়, প্রথমেই সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধীরেসুস্থে ঠিক পদ্ধতিতে জল ঢেলে স্নান করতে হবে। আর শিশুদের বেলায় দু’কান হাত দিয়ে চেপে জল ঢালতে হবে। কোনওভাবে জল ভিতরে চলে গেলে, অকারণে খোঁচাখুঁচি করা যাবে না। কাঠি বা তুলো দিয়ে জল বের করার চেষ্টা করা খুব বিপজ্জনক। কানে অল্প জল ঢুকলে তা নিজে থেকেই ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাচ্ছে কি না দেখতে হবে। নইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময় অসাবধানে তার কানে দুধ ঢুকে পুঁজ হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার খেলাচ্ছলেও বাচ্চারা কানে জল ঢুকিয়ে ফেলে ও সেখান থেকেও বিপত্তি হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাড়তি কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
আর একটা কথা এখানে না বললেই নয়। অনেক শিশু কথা বলতে শেখে দেরিতে। এমন ক্ষেত্রে তার কানের কোনও সমস্যা আছে কি না সেটা কিন্তু দেখে নেওয়া দরকার। অনেক সময় কথা শুনতে অসুবিধা হয় বলে , সে কথা বলে উঠতে পারে না । তাই কানের পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ ।
৩. কী করে বুঝবেন সন্তান জন্মের পর কানে শুনতে পাচ্ছে কি না?
সাধারণত, ৪-৫ মাস বয়স থেকেই নানা শব্দ চিনতে পারে বাচ্চা। মাথা ও চোখ নাড়ায় শব্দের সঙ্গে সঙ্গে। তেমনটি না হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ কানে না শোনার জন্য সে মূক বা বোবা হতে পারে। তাই প্রথম ৩ মাস হিয়ারিং এড ও স্পিচ থেরাপি করে দেখতে হবে শিশু কানে শুনতে পাচ্ছে কি না বা শব্দ করতে পারছে কি না। তাতেও উন্নতি না হলে ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট করতে হয়। এই অপারেশনের খরচ প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। পিজি হাসপাতালে এই অপারেশন বিনামূল্যে হয়। তবে এই অপারেশন শিশুর ৫ বছর বয়সের মধ্যে করাতে হবে।
৪. আজকাল ট্রেনে, বাসে, ওষুধের দোকানে কান পরিষ্কার করার বাডস বিক্রি হয়। এগুলো কতটা নিরাপদ?
নিরাপদ তো নয়ই, বরং বিপজ্জনক। এই স্টিকের মাথায় আটকানো তুলো কানে ঢুকে বড় বিপত্তি ঘটতে পারে। অস্ত্রোপচার অবধি গড়াতে পারে। নিয়মিতভাবে কানের ময়লা বের করার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। কথা বলা, হাঁচি, কাশির সময় কানের পেশি সঞ্চালিত হয়। ওই সময় কানের নরম ময়লা এমনিই বের হয়ে যায়। কিন্তু কোনও বাডস দিয়ে খোঁচালে এই ময়লা আরও ভিতর দিকে ঢুকে যেতে পারে। তাতে সমস্যা বাড়ে। কানের কঠিন ময়লা পরিষ্কার করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাঁর দেওয়া কানের ড্রপ ব্যবহার করলে কানের শক্ত ময়লা নরম হয়ে যায়। দিন পাঁচ-সাত নিয়ম অনুযায়ী এই ড্রপ ব্যবহার করলে কানের ময়লা থেকে মুক্তি মেলে।
৫. কানের ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার না করলেও তো অসুখ করতে পারে?
সে তো বটেই। কানের দু'টি কাজ। শোনা এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা। কানের ভিতরের অংশকে রক্ষার জন্য এক ধরনের মোমের মতো বস্তু থাকে। বাইরের ধুলোবালি, দূষণের সংস্পর্শে এসে তা ময়লা হিসেবে জমে। এর উপর কোনও কারণে কানে তালা লাগলে বা জল ঢুকলে ওই ময়লা জলীয় বস্তুর সংস্পর্শে পচে গিয়ে পুঁজ তৈরি করে। তাই কান নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হয়। নইলে বধিরতা আসতে পারে
৬. অনেকসময় দেখা যায়, কান পেকেছে বলছেন অনেকে। এই কানপাকা রোগটা ঠিক কী?
কোনও কারণে কানে পুঁজ জমলে খুব যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন তাকে কানপাকা বলে ডাকেন অনেকে। এই সমস্যায় কানে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ হতে থাকে, পুঁজ পড়ে, ব্যথা হয়, ভিতরে প্রদাহও হয় অনেক সময়। শুধু কানের ময়লার সঙ্গে জল মিশে পুঁজ তৈরি করলেই এই অসুখ হয়, এমনটা নয়। অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সচেতনতার অভাবও কানপাকার কারণ।
৭. কানে ব্যথা হলে কী করতে হবে?
কানে ব্যথা কিন্তু নানা কারণে হয়। তাই কানে ব্যথা মানেই সেটা কানপাকা এমন নাও হতে পারে। তাই কানের ব্যথা হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কানের ব্যথায় অনেকে যে গরম তেল দেন বা বাজারচলতি কিছু ড্রপ ব্যবহার করেন, এমন না করাই বাঞ্ছনীয়। বরং প্রথমেই চিকিৎসকের মত অনুযায়ী চললে বিপদের শঙ্কা কমে
৮. কানে কম শোনাও খুব প্রচলিত সমস্যা। এখন অনেক কমবয়সিদেরও এটা হয়। এই সমস্যা কেন হয় ?
কানে কম শোনা দু'ভাবে হতে পারে। কনডাক্টিভ আর সেনসরিনিউরাল। আমরা যখন কিছু শুনি, শব্দ হওয়া থেকে শোনা পর্যন্ত কতগুলো স্তর পেরিয়ে যেতে হয়। যেমন কোথাও কোনও শব্দ হল, এবার সেই শব্দ বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ পেরিয়ে আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছয়। এই পথ পেরনোর রাস্তায় যদি বাধা তৈরি হয়, তা থেকে যে কানে কম শোনার সমস্যা তৈরি হয়, তাকে বলে কনডাক্টিভ হিয়ারিং লস। আবার অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত যাওয়ার পথে শব্দতরঙ্গ কোনও বাধা পেলে তাকে সেনসরিনিউরাল হিয়ারিং লস বলে। এই দুই ধরনের হিয়ারিং লস-এর কারণে কিন্তু মূক হতে পারেন রোগী। কানে শব্দ পৌঁছয় না বলে কথা বলতে শেখেন না অনেকে।
ধন্যবাদ ! এই গুরুত্বপূর্ন হেলথ টিপস টি আপনার বন্ধুদের মাঝে সেয়ার করে ছিড়িয়ে দিন। সেয়ার করার জন্য নিচের হোয়াটস অ্যাপ বাটনে ক্লিক করুন।