ফলের ভেতর পোকা ঢোকে কীভাবে?

ফলের ভেতর পোকা ঢোকে কীভাবে?



সুন্দর একটা পেয়ারা। কোনো খুঁত নেই। কিন্তু কামড় দেয়ার পরই দেখলেন বিশ্রী অবস্থা? ভেতরে সাদা সাদা পোকা গিজগিজ করছে। ওয়াক থু! পুরো পেয়ারাটা ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

 

প্রশ্ন হলো, নিখুঁত একটা পেয়ারার ভেতর পোকা ঢুকল কী করে?

 

এসব পোকা কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কোনো পোকা নয়। বোলতাজাতীয় পোকার জীবনের প্রাথমিক অবস্থা। এসব পোকার জীবনে মূলত চারটি ধাপ থাকে। ডিম, লার্ভা বা শূককীট, পিউপা বা মূককীট এবং সবশেষে পূর্ণাঙ্গ পোকা।

পেয়ারা বা নরম ফলের ভেতর যেসব পোকা থাকে, এগুলোর বেশির ভাগই একধরনের বোলতার শূককীট। বোলতাদের পেছন দিকে মৌমাছির মতো হুল থাকে। এ হুল শুধু শত্রুদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে না এরা। পেয়ারা বা এ-জাতীয় ফল পাকার কিছুদিন বোলতারা এর ভেতর ডিম পাড়ে। ডিম তো ভেতরে ঢুকে পাড়তে পারে না! তাই হুলের সাহায্য নেয়। হুল দিয়ে ফলের গায়ে সূক্ষ্ম গভীর ছিদ্র করে। তারপর ডিম পাড়ে সেই গর্তের মুখে। হুলের সাহায্যে ঠেলে সেই ডিম ঢুকিয়ে দেয় ফলের ভেতরে। ফল যখন পাকা শুরু করে, ততদিনে ডিম ফুটে শূককীট বের হয়। ফলের নরম শাঁস খেয়েই বেড়ে ওঠে কিলবিলে পোকাগুলো। ততদিনে অবশ্য ফলের গায়ের সেই সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলোও মিলিয়ে গেছে। অর্থাৎ ফলের ভেতর বোলতার ছানারা একই সঙ্গে খাবারের জোগান পেয়ে যায় আবার শত্রু নাগাল থেকেও নিরাপদ! এ জন্যই পোকার হাত থেকে বাঁচতে চাষিরা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট দিয়ে ফল মুড়িয়ে রাখেন। এই প্যাকেট ভেদ করে ফলের ভেতর ঢুকতে পারে না বোলতার হুল।

 

আবার কেও কেও বলে,- পোকা ফলের ভেতরেও জন্মাতে পারে আবার বাইরে থেকেও ভেতরে ঢুকতে পারে। কতদিন পর পোকা দেখা গেল তার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। ডিম থেকে পোকা বেরোতে অন্তত ১০-১২ দিন সময় লাগে। যদি গাছ থেকে পাকা আম পেরে আনার দু-তিন দিনের মধ্যে পোকা দেখা যায়, তাহলে এমন হতে পারে যে আমের ভেতর ডিম আগে থেকেই ফোটার প্রক্রিয়ায় ছিল, বাসায় আনার পর পোকা বেরিয়েছে।

আবার যদি বাসায় আনার ১০-১২ দিন পর পোকা দেখা দেয়, তাহলে তা বাইরে থেকে আসার আশঙ্কাই বেশি। সাধারণত ফলের পোকা মাত্র দুই থেকে চার মিলিমিটার লম্বা হয়। খালি চোখে তা সহজে দেখা যায় না।

লিচুর পোকা সাদা রঙের হয়, সেজন্য ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে ধরা যায় না

লিচুর পোকা অবশ্য সহজে ধরা যায়। প্রথমে বোঁটার কাছের খোসা সামান্য খুলে ভেতরের সাদা শাসের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হবে। যদি পোকা থাকে তাহলে তাকে নড়াচড়া করতে দেখা যাবে। লিচুর পোকা সাদা রঙের হয়। সেজন্য ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে ধরা যায় না।

যদি পোকা দেখা যায়, তাহলে মুখের সামান্য অংশ কেটে ফেলে বাকি অংশ নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। আজকাল অবশ্য আম-লিচু প্রভৃতি ফলের পোকা দমনে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এতে পোকা ধরে না, আবার নির্দিষ্ট সময় পর ওষুধের প্রভাবও শেষ হয়ে যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post