শিশুকে ১৭ কোটির ওষুধ বিনামূল্যে দিলো NRS হাসপাতাল

মাত্র কুড়ি মাসের শিশু জিন ঘটিত বিরল রোগে আক্রান্ত। আর তাকে সুস্থ করে তুলতে সাড়ে সতেরো কোটি টাকার জিন থেরাপির ওষুধ দিল আমাদের বাংলার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ এবংহাসপাতাল । তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আজ্ঞে হ্যাঁ এই বিরল রোগেরওষুধের দাম সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। আর সেই ওষুধটাই বিনামূল্যে দিয়ে নজির গড়ল আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতাল। কে বলে বাংলায় চিকিৎসা হয় না? 

হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা রনজিত পাল পেশায় সোনার কারিগর। রনজিত বাবুর  ছেলে সৌমজিৎ । সৌম্যজিতের বয়স যখন সবে মাত্র ৬ মাস, তখন রনজিৎ বাবু এবং তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তার এই ছেলে কোনভাবেই পা তুলছে না। ছেলের এই অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সঙ্গে সঙ্গে তারা বাচ্চাটিকে নীলরতনে নিয়ে আসেন। সেখানে বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় ওই দুধের শিশুটি পায়েনার মাসকিউলার এ্যাট ট্রফি অর্থাৎ, SMA TYPE 2 তে আক্রান্ত।

এই রোগে বাচ্চাদের বৌদ্ধিক বিকাশ ঠিক থাকলেও, তাদের হাঁটা চলা বসার ক্ষমতা সবটাই কমে যায়।এটি একটি বিরলতম জিনগত রোগ জন্মের সময় প্রতি 6000 জনে একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়। এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে সম্ভাবনা থাকে প্রাণ হানির। কিন্তু আপনি বলুন না, আমাদের মত সাধারন

মানুষের কি কোটি টাকা দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব?  তাই তাই অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ালো আমাদের বাংলার সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু কিভাবে আক্রান্ত হল এই রোগে সেই ছেলেটি?কিভাবেই বা তাকে সুস্থ করে তুলছেন নীলরতন হসপিটাল এর সেই ডাক্তারেরা? আসুন আজকে সেটাই বলবো এই পোস্টে। সৌম্যজিৎ তার তার মায়ের কোলে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু তার মা লক্ষ্য করে যে, তার ছেলে কোনোভাবেই পা তুলছে না। তাছাড়াও তিনি লক্ষ্য করেন তার ছেলের ছোট শরীরে আরো নানান বিষয়, চিন্তার ভাঁজপরে খাদ্য বাবা-মা হওয়া দম্পতির কপালে। তড়িঘড়ি তারা যোগাযোগ করেন নীলরতন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 

সেই ডাক্তারদের একের পর এক পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট শুরু হয় এর এক মাস পর ছেলেটি এস এম এ টাইপ টু ধরা পড়ে ।খুব স্বাভাবিকভাবেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ছোট্ট সম্যজিতের বাবা-মায়ের।  চিকিৎসকেরা জানান এই রোগ কখনোই সমূলে নিরাময় হয় না ।আজীবন চিকিৎসার অধীনে থাকতে হবে সৌম্যজিৎকে। চিকিৎসার খরচ নিয়ে ডাক্তারেরা সম্মোজিতের বাবা মাকে আশ্বস্ত করেন। চিকিৎসকেরা বলছেন এই রোগটির জন্য দায়ী সারভাইভাল মোটর নিউরন। এটি আমাদের শরীরের মোটর নিউরনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ।আমাদের শরীরের যে স্নায়ু কোষ স্বাভাবিক বৃদ্ধি চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি আমাদের ছিড়দারায় থাকে।এই রোগে স্নায়ু কোষ ছাড়া দিতে পারে না বেশি তার ফলে এট্রফি হয়। আমেরিকার জন হকিন মেডিকেল কলেজের তথ্য অনুসারে এই রোগ এতটাই বিরল যে ৬০০০ শিশুর মধ্যে মাত্র একজন আক্রান্ত হয়। যেকোনো বয়সেই শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আসলে এটি জিনের জন্মগত ত্রুটি। এনআরএস হাসপাতালে নিউরন বিভাগের চিকিৎসক যশোধরা চৌধুরী বলেন এই রোগে বাচ্চাটি ঠিকমতো বসতে পারছে না ওর ঘাড়ও এখনো শক্ত হয়নি।

তিনি আশা করছেন এই থেরাপির ফলে সৌম্যজিতের শরীরে এই রোগের বাড়ন্ত কিছুটা হলেও কমানো যাবে। একই সঙ্গে এই চিকিৎসার পাশাপাশি তার ফিজিক্যাল থেরাপি সহ অন্যান্য চিকিৎসাও চলবে। তাই এই মুহূর্তে বিদেশী ঔষধ কোম্পানির সঙ্গে জিন থেরাপির বিনামূল্যে দেওয়ার প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে সৌম্যজিৎকে।  যেহেতু এটি বিরলতম রোগ তাই এই প্রকল্পের আওতায় হাতে গোনা কয়েকজন শিশুই রয়েছে। বর্তমানে সৌমজিৎ এর নামও ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হলো । নিজের সন্তানকে এরকম কষ্ট পেতে দেখে রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন সৌম্যজিতের বাবা মা কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছেন আমাদের পশ্চিমবাংলার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ।

তথ্য সংগ্রহঃ- UltiMad Motivation

Post a Comment

Previous Post Next Post